ঢাকা: পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধানের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে খবর প্রচারিত হয়েছিল, তা একেবারেই মিথ্যা বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। বৃহস্পতিবার ফেসবুকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ফ্যাক্টস এই সংবাদটি রেকর্ড করে বলেছে যে, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের প্রধান আসলে বাংলাদেশ সফরে আসেননি। এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও গণমাধ্যমে এই খবরের মিথ্যাচারিতা নিশ্চিত করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানায়, “গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যে খবর প্রচারিত হয়েছে, তা ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।” এই পোস্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার নিশ্চিত করেছে যে, আইএসআই প্রধানের বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা সঠিক নয় এবং কোনো ধরনের সত্যতা নেই।
এই খবর প্রকাশ হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই আইএসআই প্রধানের বাংলাদেশ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছিলেন, এবং এর ফলে দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যত সম্পর্কে নানা ধরনের অনুমান করা হচ্ছিল।
সম্প্রতি কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়েছিল যে, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান বাংলাদেশ সফরে এসেছেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছেন। এই খবরটি প্রচারিত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং ধারণা করা হচ্ছিল যে, এর পেছনে পাকিস্তানের কিছু গোপন উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
এছাড়া, কিছু সংবাদমাধ্যমও এই খবর প্রচার করে, যার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে দ্রুত এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রকাশ করা হয় এবং খবরটির ভিত্তিহীনতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রও গণমাধ্যমে এক বক্তব্যে জানান, “কোনো পাকিস্তানি কর্মকর্তা, বিশেষ করে আইএসআই প্রধান, বাংলাদেশ সফর করেননি। যা কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এ বিষয়ে কোনো ধরনের সত্যতা পাওয়া যায়নি।” মুখপাত্র আরও জানান, দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে কোনো ধরনের আতঙ্কের কারণ নেই, এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরনের কার্যক্রম স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
এটি উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যাপারে বেশ কয়েকটি দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সতর্কতা অবলম্বন করে থাকে। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা বা তাদের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা গেছে। তবে, বাংলাদেশের সরকারি পক্ষ থেকে প্রায়ই এই ধরনের খবর প্রত্যাখ্যান করা হয়।
পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, পাকিস্তানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী সংস্থা হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের নানা পর্যায়ের টানাপোড়েন দেখা গেছে, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর। সে সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং আইএসআইয়ের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনাও হয়ে থাকে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারও আইএসআইয়ের কার্যক্রম নিয়ে প্রায়ই উদ্বেগ প্রকাশ করে থাকে, বিশেষ করে যখন পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলি পাকিস্তানি সংস্থার গতিবিধির প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেকটা শান্তিপূর্ণ এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
এমন একটি সময়ে যখন পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রধানের সফরের খবর প্রচারিত হয়, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে কিছুটা উদ্বেগ তৈরি হয়। বিশেষ করে অনেকেই মনে করেন যে, দুই দেশের মধ্যে এমন কোনো ঘটনা বা আলোচনা হতে পারে, যা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের তরফ থেকে দ্রুত এই খবরের মিথ্যাচারিতা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। তারা এখন নিশ্চিন্ত হতে পারেন যে, এই ধরনের কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি এবং দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যাপ্তভাবে নিয়ন্ত্রিত রয়েছে।
এই ঘটনা থেকে এটি স্পষ্ট যে, গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আজকাল যেকোনো খবর খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, তাই গণমাধ্যমের দায়িত্ব হলো শুধুমাত্র নির্ভরযোগ্য তথ্য প্রচার করা। মিথ্যা খবর বা গুজব ছড়িয়ে পড়লে তা দেশ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তবে কিছু সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো জানাতে পারেনি, যে খবরটি তারা প্রচার করেছে তা মিথ্যা ছিল। এই বিষয়ে আরও সতর্কতা ও সচেতনতা প্রয়োজন, যেন ভবিষ্যতে এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
আইএসআই প্রধানের বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে যে মিথ্যা খবরটি সম্প্রতি প্রচারিত হয়েছিল, তা মূলত বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিথ্যা খবরটির ভিত্তিহীনতা নিশ্চিত করার পর, সাধারণ জনগণ এখন আরো শান্তিপূর্ণ মনে হচ্ছে। এটি ভবিষ্যতে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকার প্রয়োজনীয়তার উপরও আলোকপাত করেছে।