এআই দুনিয়ায় চীনের চ্যালেঞ্জ: আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্যে নড়চড়

এআই দুনিয়ায় চীনের চ্যালেঞ্জ: আমেরিকার একচ্ছত্র আধিপত্যে নড়চড়

0
28
Deepseek- file photo
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তি নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে এই খাতে আমেরিকার আধিপত্য থাকলেও, চীনা স্টার্টআপ ডিপসিক একটি বড় ধাক্কা দিয়েছে। নতুন এই পরিস্থিতি কেবল প্রযুক্তির দিক থেকেই নয়, বরং অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও আলোচিত হচ্ছে।

ডিপসিকের উত্থান: কীভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছে?

চীনের হাংজু শহরে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত ডিপসিকের তৈরি এআই-চালিত চ্যাটবট “ডিপসিক-আর ওয়ান” আমেরিকার প্রযুক্তি বাজারে সাড়া ফেলে দিয়েছে। এটি গত বছরের জানুয়ারিতে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে চালু হয় এবং অল্প সময়ের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া ফ্রি অ্যাপ হিসেবে শীর্ষস্থান দখল করে।

ডিপসিকের নির্মাতারা দাবি করেছেন যে তারা অত্যন্ত কম ব্যয়ে এবং নিম্নমানের কম্পিউটার চিপ ব্যবহার করেই অত্যাধুনিক এই এআই মডেল তৈরি করেছেন। যেখানে ওপেনএআই বা গুগলের মতো কোম্পানিগুলো বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে, সেখানে ডিপসিক মাত্র ৫.৬ মিলিয়ন ডলারে তাদের মডেল তৈরি করেছে।

আমেরিকার শেয়ারবাজারে প্রভাব

ডিপসিক-আর ওয়ানের সাফল্যের কারণে আমেরিকার শেয়ারবাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। এআই চিপ ডিজাইনার এনভিডিএ-এর শেয়ার মূল্য এক দিনে প্রায় ১৭ শতাংশ কমে যায়। এর ফলে কোম্পানিটি ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বাজার মূলধন হারিয়েছে, যা আমেরিকার ইতিহাসে এক দিনে কোনো কোম্পানির সবচেয়ে বড় ক্ষতি। তুলনামূলকভাবে, মেটা তিন বছর আগে ২৪০ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছিল, যা এখনো একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ডিপসিকের সাফল্য এনভিডিএ, অ্যালফাবেট এবং মেটার মতো প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর ভবিষ্যৎ আয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এটি শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে।

এআই প্রতিযোগিতায় ব্যয়ের পার্থক্য

চ্যাটজিপিটির নির্মাতা ওপেনএআই গত বছর পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যা ডিপসিকের খরচের তুলনায় অনেক বেশি। এই তুলনামূলক ব্যয়ের পার্থক্যই প্রমাণ করে যে বড় বাজেট ছাড়াও সাফল্য অর্জন সম্ভব। ডিপসিক কম ব্যয় এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতায় নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

ডিপসিক: প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ নাকি নিরাপত্তার ঝুঁকি?

যদিও ডিপসিক একটি শক্তিশালী এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে প্রশংসা পাচ্ছে, তবুও এটি সাইবার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যেই জনগণকে এর ব্যবহার সম্পর্কে সতর্ক করেছে। দেশটির শিল্প ও বিজ্ঞানমন্ত্রী এড হুসিক বলেছেন, এটি ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। সাইবার নিরাপত্তার জন্য এটি একটি বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে, বিশেষত যেসব দেশে তথ্য সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমেরিকার প্রতিক্রিয়া

ডিপসিকের সাফল্যে আমেরিকার প্রযুক্তি খাত ইতিবাচক এবং নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চীনের মতো কম দামের চিপ ব্যবহার করলে আমেরিকার প্রযুক্তিবিদরা একই সাফল্য অর্জন করতে পারে। তবে ট্রাম্প আশাবাদী যে আমেরিকা চীনের থেকে এগিয়ে থাকবে।

চীন-আমেরিকার স্নায়ু যুদ্ধ

এআই প্রতিযোগিতা এখন শুধু প্রযুক্তিগত নয়, বরং অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রতীক হয়ে উঠেছে। চীন এবং আমেরিকার মধ্যে এই স্নায়ু যুদ্ধ বৈশ্বিক প্রযুক্তি শিল্পকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। চীনের এই অগ্রগতি দেখিয়ে দিচ্ছে যে কম ব্যয়ে এবং সীমিত সম্পদেও বড় সাফল্য অর্জন সম্ভব।

বৈশ্বিক প্রভাব

ডিপসিকের সাফল্য এআই খাতে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে বড় প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর একচেটিয়া আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। তবে, সাইবার নিরাপত্তা এবং তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি শিল্প এখন একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ডিপসিকের সাফল্য দেখিয়ে দিচ্ছে যে প্রতিযোগিতা কেবল কাজকে সহজ করার জন্য নয়, বরং সঠিক পছন্দ এবং বিকল্পের সুযোগ তৈরির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিযোগিতা বৈশ্বিক প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যৎকে বহুমাত্রিক করে তুলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here