গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ শনিবার এক ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় চারজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বেলা আড়াইটার দিকে ঘটে।
হামলার অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক এবং অন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ চালায় এবং ওই ছাত্রলীগ কর্মীকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। হামলার শিকার হন কৃষিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর শরীফ, যাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। এই ঘটনার সময় ক্যাম্পাসে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিকও হামলার শিকার হন।
এদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মী শরিফুল ইসলাম (সোহাগ) হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেন, “আমি যখন আটক হই, তখন আমার সহপাঠীরা আমাকে সেভ করে ক্যাম্পাসের বাইরে নিয়ে যান। আমি তাদের বিরুদ্ধে কোনো হামলা করিনি।”
শরিফুল ইসলাম ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী এবং জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের বিরোধিতায় তার উপস্থিতি এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, শরিফুল ইসলাম আজ পরীক্ষায় অংশ নিতে এলে, তাঁরা তাকে আটক করে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার সহকর্মীরা এসে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শরিফুল ইসলামের সহকর্মীরা ছাত্রলীগের অন্যান্য কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করেন এবং “জয় বাংলা” স্লোগান দেন।
হামলার শিকার সমন্বয়ক জসিম উদ্দিন বলেন, “শরিফুল ইসলাম, যিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তার আধিপত্য দেখাতে থাকে। আজ, যখন তাকে আটক করা হয়, ছাত্রলীগের কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।” তিনি আরও জানান, তারা প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলছেন, যেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
অন্যদিকে, অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার উপর অন্যায় করা হয়েছে, আমি কখনো কোনো শিক্ষার্থীর ওপর অত্যাচার করিনি। আমার বাবা দীর্ঘদিন ক্যানসারে আক্রান্ত, আমি পরীক্ষা শেষ করে চাকরি পাওয়ার জন্য চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমাকে ধরে পুলিশে দিতে চাওয়া হয়েছে, যা অত্যাচার ছিল।” এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের ১১ জন কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রক্টরের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজীব জানান, “এই বিষয়ে সন্ধ্যায় একটি মিটিং ডাকা হয়েছে, তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেবো কী করা যেতে পারে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের সংঘর্ষ এবং হামলার ঘটনা শিক্ষাঙ্গণের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে পারে এবং রাজনৈতিক সংঘর্ষের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং সাংবিধানিক অধিকারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সবাই তাকিয়ে আছেন, কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ঘটনা তদন্ত করে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।