বাংলাদেশে শীত মৌসুমে বিভিন্ন পুষ্টিকর শাকসবজি উৎপাদিত হয়। মুখোরোচক এই সকল শাক সবজি অত্যন্ত অল্প মূল্যে সকল স্থানেই অনায়াসে সহজলভ্য হওয়ায় তা আমাদের সারা বছরের খাবারে চাহিদাকে পুরনে সমর্থ হয়। এই শাকসবজি শুধুমাত্র খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, পাশাপাশি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিচে এসব শীতকালীন শাকসবজির তালিকা এবং তাদের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা দেওয়া হলো:
১. পালংশাক
পুষ্টিগুণ:

- পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, সি এবং কে পাওয়া যায়।
- এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ।
দৈনন্দিন চাহিদা:
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক আয়রনের চাহিদার প্রায় ১৫-২০% পূরণ করতে পারে।
উপকারিতা:
- রক্তশূন্যতা দূর করতে সহায়তা করে।
- হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে।
- চর্ম রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।
২. মুলাশাক ও মুলা

পুষ্টিগুণ:
- মুলাশাকে ভিটামিন এ, সি, ক্যালসিয়াম এবং আঁশ পাওয়া যায়।
- মুলায় সালফার যৌগ থাকে, যা লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে।
দৈনন্দিন চাহিদা:
- শরীরের প্রয়োজনীয় আঁশের একটি বড় অংশ মুলা দিয়ে পূরণ করা সম্ভব।
উপকারিতা:
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- লিভারের সুস্থতা বজায় রাখে।
৩. লালশাক

পুষ্টিগুণ:
- লালশাকে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে।
- এতে ফাইটোকেমিক্যাল থাকে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
দৈনন্দিন চাহিদা:
- এটি ভিটামিন সি-এর চাহিদার প্রায় ২৫-৩০% পূরণ করতে পারে।
উপকারিতা:
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৪. ব্রকোলি

পুষ্টিগুণ:
- ব্রকোলি ভিটামিন এ, সি, কে এবং ফোলেটে সমৃদ্ধ।
- এতে ফাইবার এবং পটাশিয়াম রয়েছে।
দৈনন্দিন চাহিদা:
- ব্রকোলি একজন প্রাপ্তবয়স্কের দৈনিক ভিটামিন সি-এর প্রয়োজনের ৭০-৮০% পূরণ করতে পারে।
উপকারিতা:
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকর।
৫. বাঁধাকপি

পুষ্টিগুণ:
- বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে, সি এবং ফাইবার পাওয়া যায়।
- এতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান রয়েছে।
দৈনন্দিন চাহিদা:
- এটি হজম শক্তি বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপকারিতা:
- পাকস্থলীর আলসার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
- ওজন কমাতে কার্যকর।
- হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৬. ফুলকপি

পুষ্টিগুণ:
- ফুলকপিতে ভিটামিন সি, কে এবং ফোলেট প্রচুর পরিমাণে থাকে।
- এটি একটি কম-ক্যালোরি খাবার।
দৈনন্দিন চাহিদা:
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ফাইবারের চাহিদার ১৫-২০% পূরণ করতে পারে।
উপকারিতা:
- মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- কোলেস্টেরল কমায়।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৭. শালগম

পুষ্টিগুণ:
- শালগমে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ক্যালসিয়াম থাকে।
- এতে কম-ক্যালোরি এবং প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে।
দৈনন্দিন চাহিদা:
- শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের একটি বড় অংশ শালগম থেকে পাওয়া যায়।
উপকারিতা:
- হাড় মজবুত করে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
৮. গাজর

পুষ্টিগুণ:
- গাজরে বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন এ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
- এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে।
দৈনন্দিন চাহিদা:
- একজন মানুষের দৈনিক ভিটামিন এ-এর চাহিদার প্রায় ১২০-১৫০% গাজর পূরণ করতে পারে।
উপকারিতা:
- চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে।
- ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- ত্বক এবং চুলের জন্য উপকারী।
৯. কচু শাক

পুষ্টিগুণ:
- কচু শাকে ভিটামিন এ, আয়রন এবং ফাইবার থাকে।
- এটি অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানে সমৃদ্ধ।
দৈনন্দিন চাহিদা:
- আয়রনের ঘাটতি পূরণে এটি কার্যকর।
উপকারিতা:
- রক্তস্বল্পতা দূর করে।
- শরীরকে ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে।
- ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
১০. শিম

পুষ্টিগুণ:
- শিমে প্রোটিন, ফাইবার এবং ভিটামিন বি থাকে।
- এতে কম ফ্যাট এবং উচ্চ পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে।
দৈনন্দিন চাহিদা:
- এটি শরীরের এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
উপকারিতা:
- হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
- ওজন কমাতে সহায়তা করে।
শীতকালীন শাকসবজি বাংলাদেশের মানুষের জন্য অপার পুষ্টিগুণের উৎস। এগুলো নিয়মিত খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং বিভিন্ন রোগ যেমন চর্মরোগ,হৃদরোগ, দৃষ্টিহীনতা, লিভার ডিজিজ,কিডনি ডিজিজ এমনকি দুরারোগ্য ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্থানীয় বাজার থেকে তাজা শীতকালীন শাকসবজি কিনে আমাদের পরিবারের জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।