তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ: বৃষ্টির মতো কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত

তীব্র শীতে কাঁপছে দেশ: বৃষ্টির মতো কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত

0
45
winter

বাংলাদেশের আজকের শীতকালীন আবহাওয়ার পরিস্থিতি: কুয়াশা, শৈত্যপ্রবাহ এবং তাপমাত্রার পূর্বাভাস; গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় শীতের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীত জনজীবনকে ব্যাহত করছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল থেকে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চল পর্যন্ত শীতের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অধিকাংশ স্থানে দিনের বেলাতেও সূর্যের দেখা মিলছে না গত দুদিন। তীব্র কুয়াশা ও হিমেল হাওয়া সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে এবং এর প্রভাব বেশ কয়েকদিন স্থায়ী হবে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

তাপমাত্রা পরিস্থিতি; তাপমাত্রার দিক থেকে দেশের উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগে শীতের প্রকোপ বেশি। বৃহস্পতিবার ২ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল দিনাজপুরে ৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সারা দেশে এ সময়ের সর্বনিম্ন। রাজধানী ঢাকায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের দক্ষিণাঞ্চল, যেমন খুলনা ও বরিশাল বিভাগে তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি, তবে সেখানেও শীতের অনুভূতি স্পষ্ট। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল কক্সবাজারে, যেখানে দিনের বেলা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে ছিল। তবে কুয়াশার কারণে দিনের বেলায় স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে কম উষ্ণতা অনুভূত হয়েছে।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গত দুই দিন ধরে “বৃষ্টির মতো কুয়াশা” পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি একটি বিশেষ পরিস্থিতি, যেখানে কুয়াশার ঘনত্ব এত বেশি যে তা বৃষ্টির মতো পড়তে থাকে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে যানবাহনের চলাচলে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়। রাজধানী ঢাকায় শুক্রবার ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।

আগামী দুদিন দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে পরবর্তী দিনগুলোতে, বিশেষ করে ৬ জানুয়ারির পর, তাপমাত্রা আবারও কমতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলে রাতের তাপমাত্রা ৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়বে। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে কুয়াশার প্রকোপ বেশি থাকবে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বর্ধিত পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে যে ৭ জানুয়ারি থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় এবং লালমনিরহাট জেলাগুলোতে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।

বাংলাদেশের বর্তমান শীতকালীন পরিস্থিতির সঙ্গে বৈশ্বিক আবহাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লা নিনার প্রভাব এই শীতের তীব্রতাকে বাড়িয়ে তুলেছে। লা নিনা পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়ার শীতকে প্রভাবিত করে এবং দীর্ঘমেয়াদি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা তৈরি করে।

তীব্র শীতের কারণে দেশের খেটে খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছে। গরম কাপড়ের অভাবে ছিন্নমূল মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের গ্রামীণ এলাকায় শীতের প্রকোপে কৃষি কাজ, মাছ ধরাসহ বিভিন্ন খাতের কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের শীতকালীন আবহাওয়া দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, তীব্র শীত আরও কিছুদিন থাকতে পারে, যা জনজীবনকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ ও জরুরি সহায়তা কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here