নতুন বছরে শিক্ষার্থীদের জন্য বই বিতরণ একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা হচ্ছে, যা পূর্বাবর্তি সরকারের রেখে যাওয়া দুর্নিতীর পাহারকে সরিয়ে বাস্তবায়ন করা বেশ দুঃসাধ্য হলেও, এটিকে সর্বস্তরের সহযোগীতা ও বিভিন্ন প্রতিকুলতা অতিক্রম করে আগামী ফেব্রুয়ারীতে সবার হাতে নতুন বই পৌছে দেয়া হবে বলে যানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়।
পৌষের শীত উপেক্ষা করে নতুন বছরের প্রথম দিন দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে বরাবরের মতো এবার ঘটা করে বই উৎসবের আয়োজন না করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি। এর মূল কারণ বই ছাপানো ও বিতরণে জটিলতা এবং সময়মতো কার্যক্রম সম্পন্ন করতে না পারা।
২০২৪ সালের নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে প্রায় ৪১ কোটি পাঠ্যবই প্রয়োজন। তবে, বছরের প্রথম দিনে মাত্র ৬ কোটি বই বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হাতে প্রাথমিকভাবে বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত বই পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী নতুন বই না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন।
কেন সবার হাতে বই পৌঁছাতে বিলম্ব হল সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক; বই বিতরণে বিলম্বের পেছনে রয়েছে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কারণ। শিক্ষাক্রম পরিবর্তন: পুরোনো শিক্ষাক্রমে ফিরে গিয়ে ৪৪১টি বই পরিমার্জন করতে হয়েছে। দরপত্র বাতিল ও নতুন দরপত্র প্রক্রিয়া: আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করতে গিয়ে বেশ দেরি হয়েছে। পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান চূড়ান্তকরণে বিলম্ব: পাঠ্যবইয়ের গুণগত মান নিশ্চিত করার জন্য প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করতে অতিরিক্ত সময় লেগেছে। পাণ্ডুলিপি প্রস্তুতিতে সমস্যা: পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি সময়মতো প্রস্তুত করা যায়নি। ষড়যন্ত্র ও অভিজ্ঞতার অভাব: বই ছাপার প্রক্রিয়া বিভিন্ন পর্যায়ে ষড়যন্ত্র ও দক্ষতার অভাবের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান বলেছেন, ১৫ জানুয়ারি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেছেন, ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। তবে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি। ড. মাহমুদ বলেন, বই ছাপানোর কাজ এবার যুদ্ধের মতো চ্যালেঞ্জিং ছিল। উন্নতমানের কাগজ ও মলাট ব্যবহার করা, বিদেশে ছাপানোর বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করা, এবং নতুন অভিজ্ঞতাহীন কর্মীদের যুক্ত করা, এই পুরো প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে।
বই বিতরণের ধীরগতির কারণে অনলাইন পাঠ্যবই ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে বই ডাউনলোড করতে পারবেন।
এবারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এনসিটিবি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে চায়:
একচেটিয়া ব্যবসা বন্ধ করা: মুদ্রণশিল্পের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। প্রাথমিক প্রস্তুতির সময় বৃদ্ধি: ভবিষ্যতে বই ছাপার কাজ আরও আগে শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে। অনলাইন ব্যবস্থার উন্নয়ন: ডিজিটাল ভার্সন ব্যবহার বাড়াতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, বই ছাপার প্রতিটি ধাপে ষড়যন্ত্র ছিল। বিভিন্ন প্রেসের মালিক, কাগজ সরবরাহকারী এবং সিন্ডিকেটের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে, এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে পাঠ্যবই বিতরণে যে চ্যালেঞ্জগুলো দেখা দিয়েছে, সেগুলো শুধুমাত্র একটি শিক্ষা কার্যক্রম নয়, বরং শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক অবকাঠামোর উন্নতির প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে। তবে, প্রথম দিনে সীমিত সংখ্যক বই বিতরণ হলেও অনলাইন সংস্করণ এবং আগামী দুই মাসের মধ্যে সব বই সরবরাহের প্রতিশ্রুতি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেছে। বই বিতরণের এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করে ভবিষ্যতে সময়মতো এবং মানসম্পন্ন বই সরবরাহ করতে সরকার আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করা যায়।