বিএনপি ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার (২৪ জানুয়ারি) খেলাফত মজলিসের সঙ্গে একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে বিএনপি।
খেলাফত মজলিস একসময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শরিক ছিল। ২০২১ সালে জোট থেকে বের হয়ে গেলেও তিন বছর পর দুই দলের মধ্যে আবার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হলো। এই বৈঠকে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। খেলাফত মজলিসের পক্ষে আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের নেতৃত্ব দেন।
বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য আলোচনা হচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “বাংলাদেশে যাঁরাই রাজনীতি করেন, তাঁরা নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার জন্য যাঁদের সঙ্গে মতের মিল হবে, তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন।”
এদিকে, ইসলামি আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের সাম্প্রতিক বৈঠককেও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে।
জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত
বিএনপি ও খেলাফত মজলিস সাতটি বিষয়ে একমত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
- জাতীয় ঐক্য সুসংহত করতে সংলাপ অব্যাহত রাখা।
- দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলার উন্নতি।
- প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন।
- ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষা এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা।
- খুন, গুম, হত্যা, নির্যাতনে জড়িতদের বিচারের ব্যবস্থা।
- বিগত সরকারের সময় দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন ইসলামি দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে।
জোটবদ্ধ রাজনীতিতে নতুন সম্ভাবনা
একসময় বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে কাজ করা ইসলামি দলগুলোর অনেকেই ভিন্ন পরিস্থিতিতে জোট ছাড়ে। এখন বিএনপি আবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ মনে করেন, এটি ক্ষমতার রাজনীতিতে পাল্লা ভারী করার চেষ্টা।
আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসব উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপি-জামায়াত সম্পর্ক এবং নতুন দিকনির্দেশনা
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব বজায় রাখছে। তবে সম্প্রতি জামায়াতের পৃথক তৎপরতা এবং অন্যান্য ইসলামি দলের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগ পুনরায় শুরু হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানারকম আলোচনা শুরু হয়েছে।
জামায়াতের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে পুনরায় ঐক্য গড়ার এ উদ্যোগে জামায়াত থাকবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। বিএনপি বর্তমানে খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলনসহ অন্য দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা করছে।
‘জোটচ্যুত’ দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু
খেলাফত মজলিস ছাড়াও বিএনপি তাদের সাবেক জোটসঙ্গী অন্যান্য ইসলামি দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। বিশেষ করে ইসলামী ঐক্যজোট এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মতো দলের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেছেন, “বিএনপির সঙ্গে একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি চিন্তাচেতনার ঐক্য গড়ে ওঠে, তাহলে আমরা তা পরবর্তী সময়ে জানাব।”
বিএনপির উদ্যোগের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হিসেবে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে একতা গড়ে তোলার চেষ্টা কাজ করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ইসলামি দলগুলোর সমর্থন বিএনপির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব
বিএনপির এই উদ্যোগ আগামী দিনের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে এই সংলাপগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ইসলামি দলগুলোর একাংশ মনে করছে, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ থাকা দেশের স্বার্থে জরুরি। এদিকে, জামায়াত এবং ইসলামী আন্দোলনের সাম্প্রতিক যোগাযোগকেও একটি নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই সংলাপগুলো কতটা সফল হবে এবং বিএনপির নেতৃত্বে ইসলামি দলগুলো একটি কার্যকর ঐক্যে পৌঁছাতে পারবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে সামগ্রিকভাবে এই উদ্যোগ দেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।