ঢাকা: জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম শাহবাগ থানায় দুটি ফেসবুক পেজের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও নোংরা তথ্য ছড়িয়ে তাঁর সম্মানহানি করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। আজ, বৃহস্পতিবার, তিনি এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা পেজ দুটি হলো ‘ক্রিমিনালস-ডিইউ’ এবং ‘ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল, ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা’।
মামলার বিষয়টি জানিয়ে সারজিস আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, “যারা ‘ক্রিমিনালস–ডিইউ’ এবং ‘ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল’ পেজটি চালায় এবং মিথ্যা ও নোংরা তথ্য দিয়ে আমারসহ অনেক নির্দোষ মানুষের সম্মানহানি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আশা করি দ্রুত তাদের উপযুক্ত বিচারের আওতায় আনা হবে।” তিনি আরও বলেন, “যৌক্তিক সমালোচনা স্বাভাবিক, তবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হলে তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না।”
এটি উল্লেখযোগ্য যে, ‘ডিপার্টমেন্ট অব বাকশাল’ পেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা পরিচালনা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আবদুল্লাহিল বাকি তাঁর ফেসবুকে এ পেজটির প্রশাসকদের পরিচয় প্রকাশ করেন এবং জানান, এই পেজ থেকে মিথ্যা তথ্য, ব্যঙ্গাত্মক পোস্ট, কার্টুন এবং বিকৃত ছবি ছড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “এ পেজটির পেছনে ছাত্রদলের লোকজন রয়েছে,” এবং এর প্রমাণ হিসেবে কয়েকটি স্ক্রিনশটও প্রকাশ করেন।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা তানভীর আল হাদী মায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এই পেজটির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনও বলেন, “সাংগঠনিকভাবে ছাত্রদল কোনো পেজ চালায় না এবং ব্যক্তিগতভাবে যদি কেউ এ ধরনের কার্যক্রমে যুক্ত থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সারজিস আলমের মামলার বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ খালিদ মনসুর প্রথম আলোকে জানান, “মামলাটি দুপুর ১২টার দিকে করা হয়েছে এবং সিটিটিসি (কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) সাইবার ক্রাইম বিভাগ মামলাটি তদন্ত করবে।”
এই মামলার মাধ্যমে মিথ্যা ও অপপ্রচার ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে সরকার ও নাগরিক সমাজে আলোচনা চলছে। সারজিস আলমের মতো অন্যরাও সামাজিক মাধ্যমের অপব্যবহারের শিকার হয়ে এই ধরনের মামলা দায়ের করতে শুরু করেছেন, যা ইন্টারনেটে দুর্বৃত্ত কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সবার জন্য একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ ধরনের ঘটনা থেকে এটি স্পষ্ট যে, সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি যথাযথভাবে ব্যবহার করা না হলে তা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। মিথ্যা ও অপপ্রচারমূলক তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ফলে অনেক নির্দোষ মানুষের সম্মানহানি হয়, এবং এটি দেশের শান্তি শৃঙ্খলাকেও বিঘ্নিত করে। এই প্রেক্ষাপটে, গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারীদের সচেতন থাকতে হবে, যাতে অপব্যবহার এবং মিথ্যা তথ্য থেকে সমাজ রক্ষা পায়।
এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের আইনি পদক্ষেপ সমাজে একটি বার্তা পৌঁছে দিতে পারে যে, সমাজে কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা বা হানিকর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।