স্লোভাকিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ফিকোর রাশিয়ার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ

স্লোভাকিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ফিকোর রাশিয়ার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ

0
40
Mass Protests Erupt in Slovakia Over Prime Minister Fico's Pro-Russian Shift

ব্রাটিস্লাভা, স্লোভাকিয়া — স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোর রাশিয়ার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন এবং সরকারী নীতি নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। স্লোভাকিয়া জুড়ে ৬০,০০০ জনেরও বেশি মানুষ শুক্রবার বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেছে, যা সরকারের প্রতি জনগণের ক্ষোভের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিক্ষোভগুলো স্লোভাকিয়া সরকারের রাশিয়ার প্রতি নীতি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের বিরুদ্ধে, যা স্লোভাকিয়ার জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ব্রাটিস্লাভায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে অনেকেই বলছেন, তারা কখনো রাশিয়ার সাথে থাকতে চান না, তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর সাথে থাকতে চান। এক বিক্ষোভকারী ফ্রান্তিসেক ভালাচ বলেন, “আমরা রাশিয়ার সাথে থাকতে চাই না… আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকতে চাই, আমরা ন্যাটোর অংশ হতে চাই এবং আমরা তা অব্যাহত রাখতে চাই।”

প্রধানমন্ত্রী ফিকোর প্রতিক্রিয়া

ফিকো তার সরকারের বিরুদ্ধে চলা বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে বিরোধী দল এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে “অবৈধ শাসন বিরোধী আন্দোলন” চালানোর অভিযোগ করেছেন। তিনি দাবি করেন, স্লোভাকিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা (SIS) থেকে প্রাপ্ত একটি গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, কিছু অপরিচিত ব্যক্তি স্লোভাকিয়ায় উপস্থিত রয়েছেন যারা ২০১৪ সালে ইউক্রেনের বিক্ষোভ এবং ২০২২ সালে জর্জিয়ার বিক্ষোভে সাহায্য করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, বিরোধী দলগুলো সরকারের ভবন দখল করতে, রাস্তা অবরোধ করতে এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষ ঘটানোর জন্য পরিকল্পনা করছে।

ফিকো তার অভিযোগে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি, তবে তার সরকার বিরোধী দলগুলোর সাথে তীব্র বিরোধিতার মুখে অবস্থান নিয়েছে। যদিও বিরোধী দলগুলো ফিকোর সরকারকে পদত্যাগের জন্য চাপ দিচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের দাবি তুলেছে, তবে ফিকো এখনও একটি সঙ্কীর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রেখেছেন, যা তাকে সরকারের প্রতি তার অবস্থান বজায় রাখতে সহায়ক।

ইতিহাস এবং জনমত

এই বিক্ষোভগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে, ২০১৮ সালে যখন সাংবাদিক জান কুসিয়াকের হত্যাকাণ্ডের পর ফিকো পদত্যাগ করতে বাধ্য হন, তখনকার বিক্ষোভের সাথে তুলনা করা হচ্ছে। সেসময়ও স্লোভাকিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনরোষ তৈরি হয়েছিল। স্লোভাকিয়ার জনগণ আবারো সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি তাদের উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে।

জোসেফ বেটাক, ৪৯ বছর বয়সী এক টেলিকম বিশেষজ্ঞ, বিক্ষোভে অংশ নিয়ে বলেন, “ফিকো খুব আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন এবং সেটা আমাকে বিরক্ত করছে। তিনি এখন সবকিছু ভুল বুঝছেন এবং তাকে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে হবে। আমরা চুপ থাকলে কিছুই পরিবর্তন হবে না।”

স্লোভাকিয়ার ভবিষ্যৎ

এই বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে স্লোভাকিয়ার জনগণের মধ্যে গভীর বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে, কিছু মানুষ সরকারকে রাশিয়ার প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করছে, অন্যদিকে সরকারের সমর্থকরা মনে করছেন যে, স্লোভাকিয়া তার স্বাধীনতা ও সুরক্ষার জন্য এই ধরনের সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। স্লোভাকিয়ার রাজনীতির এই মোড় তার ভবিষ্যৎকেও প্রভাবিত করবে। এই মুহূর্তে, স্লোভাকিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ, সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আন্তর্জাতিক নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here