জনগণের স্বার্থে অবিচল থাকার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরার নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি নেতাকর্মীরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হন এবং দলের আদর্শের বাইরে যান, তাহলে তাদের পরিণতি ৫ আগস্টের মতো হবে।”
মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল কর্মশালায় তারেক রহমান নেতাকর্মীদের জনগণের সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, “ব্যক্তিস্বার্থ যদি দলের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তাহলে দল কোনো অবস্থাতেই তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না।”
জনগণের আস্থা ধরে রাখার আহ্বান
তারেক রহমান বিএনপির ৩১ দফা কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করে বলেন, “এই দফাগুলো জনগণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থেকে তাদের আস্থা ধরে রাখতে হবে। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলের টিকে থাকা সম্ভব নয়। বিএনপি দেশকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। তবে সেই লক্ষ্য অর্জনে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “যারা অন্যায় কাজ করবে বা দলের আদর্শের বাইরে যাবে, তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক থাকবে না। আমরা চাই দলকে সঠিক পথে নিয়ে যেতে এবং জনগণের জন্য কাজ করতে। জনগণ বিএনপির প্রতি যে আস্থা রেখেছে, তা যেন কোনোভাবেই নষ্ট না হয়।”
দলীয় সংহতির গুরুত্ব
তারেক রহমান নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখার ওপরও জোর দেন। তিনি বলেন, “দলীয় সংহতি ছাড়া কোনো দল বড় লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দলের বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করাই হলো বিএনপির সাফল্যের চাবিকাঠি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এই দলের প্রতি জনগণের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। আমাদের দায়িত্ব হলো সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ করা।”
জনগণের দাবি পূরণের অঙ্গীকার
তারেক রহমান বিএনপির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “নির্বাচনের আগে আমাদের প্রতিশ্রুতিগুলো জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে যে বিএনপি সত্যিই তাদের জন্য কাজ করতে চায়। দলীয় কর্মীরা যদি সঠিকভাবে এই কাজগুলো করেন, তাহলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই বিএনপির ওপর আস্থা রাখবে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “একটি দেশের স্থিতিশীলতা কেবল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে না। এটি অর্জন করতে হলে দেশের মানুষকে সঙ্গে নিতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তুলতে পারব।”
কর্মশালার বিস্তারিত
তারেক রহমানের এই বক্তব্য কর্মশালার অংশ হিসেবে দেওয়া হয়। কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার জেলা বিএনপির নেতারা ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ কমিটির সদস্য এবং সাবেক সংসদ সদস্যরাও কর্মশালায় অংশ নেন।
কর্মশালায় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কাজী আলাউদ্দিন ও ডা. শহিদুল আলম ছাড়াও ঢাকা থেকে আসা প্রশিক্ষণ কমিটির উপদেষ্টা ইসমাইল জাবিউল্লাহ এবং প্রশিক্ষণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা—রেহানা আক্তার বানু, মাহবুবা হাবিবা, বজলুর রহমান খোকন এবং ইকবাল হোসেন শ্যামল। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী এবং সদস্য সচিব আব্দুল আলিমসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও কর্মশালায় অংশ নেন।
৫ আগস্টের বার্তা
তারেক রহমান তাঁর বক্তব্যে ৫ আগস্টের উদাহরণ টেনে এনে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেন। তিনি বলেন, “যদি আপনারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হন, তাদের জন্য কাজ না করেন, তাহলে আপনাদের পরিণতি হবে ৫ আগস্টের মতো। জনগণের আস্থা অর্জন করা কঠিন, কিন্তু সেটি হারানো খুব সহজ। তাই আমাদের সাবধান থাকতে হবে।”
বিএনপির প্রতি জনগণের প্রত্যাশা
বাংলাদেশের জনগণ বিএনপির কাছ থেকে একটি সুষ্ঠু এবং কার্যকর নেতৃত্ব প্রত্যাশা করে। দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিএনপি যদি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে, তাহলে তা দেশের জনগণের আস্থা অর্জনে সাহায্য করবে।
তারেক রহমান বিএনপির নেতাকর্মীদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ জনগণের প্রয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। আমরা যদি সত্যিই তাদের জন্য কাজ করি, তাহলে তারা আমাদের ওপর আস্থা রাখবে।”
তারেক রহমানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, বিএনপি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি যে বার্তা দিয়েছেন, তা শুধু তাদের জন্য নয়, বরং সমগ্র জাতির জন্য একটি দিকনির্দেশনা। জনগণের পাশে থেকে তাদের কল্যাণে কাজ করাই হলো বিএনপির মূল লক্ষ্য।
এই কর্মশালার মাধ্যমে তারেক রহমান বিএনপির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যা নেতাকর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে কাজ করবে।