বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট সফর ২০২৪: একটি বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট সফর ২০২৪: একটি বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা

0
49
Bd-vs-Wi-ODI-1
ওয়েষ্ট ইন্ডিজ টুর, ছবি ডেইলিষ্টার

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে এক চ্যালেঞ্জিং সিরিজ সম্পন্ন করেছে। এই সফরে তিনটি ফরম্যাটে- টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে মোট ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি ম্যাচে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের উত্থান-পতন এবং দলের একতাবদ্ধ প্রচেষ্টা ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য স্মরণীয় করে তুলেছে এই সিরিজকে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের শুরুটা হয় দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ দিয়ে। প্রথম টেস্ট ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকার স্যাবাইনা পার্কে। ম্যাচে ওয়েষ্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে দর্দন্ত ৪৫০ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৫২ রানে তাদের খেলাশেষ করে। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৬৯ রান সংগ্রহ করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে লজ্জাকর ১৩২ রানে গুটিয়ে গেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০১ রানের বিশাল জয়লাভ করে।

দ্বিতীয় টেস্ট এই ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১৬৪ রান সংগ্রহ করে এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২৬৮ রানের একটি প্রতিযোগীতার আভাষ সৃষ্টি করে। যেখানে লড়াকু ওয়েষ্টইন্ডিজের ১ম টেষ্টের বিপরীত চিত্র তৈরী হয়, প্রথম ইনিংসে ১৪৬ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮৫ রানের মধ্যে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের বলারদের কৌশলের কাছে। ১০১ রানের বিশাল একটি ফিরতি জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ চলতি চেষ্ট সিরিজটি সমতায় নিয়ে আসে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সফর, টেষ্ট ম্যাচ – ছবি ডেইলি ষ্টার

টেস্টের হতাশাজনক ফলাফলের পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ দলের পারফরম্যান্স ছিল আরও হতাশাজনক। প্রথম ওয়ানডেতে মেহেদী হাসান ৭৪ তানজিদ হাসান ৬০ ও মাহামুদুল্লার অপরাজিত ৫০ রানে বাংলাদেশ ২৯৪ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় ওয়েষ্টইন্ডিজকে। কিন্তু শারফান রুথারফোর্ড ১১৩ ও শাহি হোপের ৮৬ রানের দৃষ্টিনন্দন দৃঢ় ব্যাটিংয়ে ১৬ বল বাকি থাকতেই ৫ উইকেট হাতে রেখে ওয়েষ্টইন্ডিজ ম্যাচ জয়লাভ করে।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দেয়া মাত্র ২২৭ রানের লক্ষমাত্রা ৭৯ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখেই ওয়েষ্টইন্ডিজ জিতে নেয় তাদের ব্যাটসম্যানদের দৃড় ও ঝড়োগতির রান সংগ্রহেই। বোলারদের সকল চেষ্টাই মৃয়মান মনে হচ্ছিল তখন। তাদের ডিফেন্স যেন কোন কাজেই আসছিল না।

শেষ ও তৃতীয় ওয়ানডেতে, বাংলাদেশদল মাহমুদুল্লাহ ৮৪ মিরাজ ৭৭ ও সৌম সরকারের ৭৩রানের দৃড় ব্যাটিংএ ৩২১ রানের একটি চমৎকার টার্গেট ছুড়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, শেষ ম্যাচেও আমির জঙ্গো ১০৪ ও কায়েছি কার্টির ৯৫ দ্রুত রানের তারা করা ম্যাচে, বাংলাদেশ তাদের শেষটা ধরে রাখতে ব্যার্থ হয়। শেষ পর্যন্ত ৪ উইকেটে বাংলাদেশ পরাজিত হয়।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়েষ্ট ইন্ডিজ সফর, ওডিআই ম্যাচ – ছবি ডেইলি ষ্টার

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয়।

প্রথম টিটোয়েন্টি ম্যাচটি ছিল দ্রুতগতির এবং উত্তেজনাপূর্ণ। বাংলাদেশ ১৪৭ রানের লক্ষ্য দিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সহজেই সকল উইকেট হারিয়ে ১৪০ রানে গুটিয়ে যায় এবং ৭ রানের হার স্বীকার করে নেয়। বাংলাদেশের বোলাররা পুরোম্যাচজুড়েই তাদের সাফল্য তুলে ধরে ক্রমান্বয়ে। এই ম্যাচে মেহেদি হাসান মিরাজের অলরাউন্ড পারফরমেন্স সকলকে উদ্দিপ্ত করে তোলে।

দ্বিতীয় টিটোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়। যদিও প্রথম দিনের চেয়ে রানসংখ্যা কমে মাত্র ১২৭ রানের টার্গেট দেওয়ার পরও ওয়েষ্ট ইন্ডিজ মাত্র ১০২ রানেই তাদের সকল উইকেট খুইয়ে বসে। ফলে বলারদের দুর্দান্ত তান্ডবে ২৭ রানের জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ। এ দিনও মেহেদি হাসান মিরাজ তার নৈপুন্য তুলে ধরেন বল ও ব্যাট উভয় ক্ষেত্রেই। সাথে শামিম হোসেনের ১৭ বলে ৩৫ রান বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক ফরাফলে অবদান রাখায় তাকে ম্যান অব দা ম্যাচ ঘোষনা করা হয়।

তৃতীয় এবং শেষ টিটোয়েন্টি বাংলাদেশ ৮০ রানের একটি বিরাট ব্যবধানে জিতে নেয় ও সিরিজ জয়ের মাধ্যমে হোয়াইট ওয়াশ নিশ্চিৎ করে। বাংলাদেশ টসে জিতে জাকের আলীর ৭২ (অপরাজিত) রানে ভর করে ১৮৭ রানের বিরাট ইনিংস ছুড়ে দেয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ তার দৃড় ব্যাটিং লাইআপের কোন সুবিচার সেদিন করতে পারেনি মাত্র ১০৯ রানে ৩ওভার ২ বল বাকি থাকতেই সিরিজ পরাজয় বরন করে।

তামিম পুরো সিরিজে সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান ছিলেন। টেস্ট, ওয়ানডে, এবং টি-টোয়েন্টি সব ফরম্যাটেই তিনি রান করেছেন এবং দলের অভিজ্ঞ ওপেনার হিসেবে তাঁর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন। জাকের আলির ছিল সফরের অন্যতম উল্লেখযোগ্য মুহূর্ত। অলরাউন্ডার মিরাজ পুরো সিরিজে বোলিং ও ব্যাটিং উভয় বিভাগে অবদান রেখেছেন। ওয়ানডে সিরিজে তাঁর অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দলের জয় নিশ্চিত করেছে। মিরাজের স্পিন বোলিং বিশেষত ওয়ানডে সিরিজে নজর কেড়েছে। তাঁর নিয়ন্ত্রিত বোলিং ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখে। ‘দ্য ফিজ’ হিসাবে পরিচিত মুস্তাফিজের বোলিং কিছু ম্যাচে কার্যকর হলেও ধারাবাহিকতার অভাব দেখা গেছে। বিশেষ করে ডেথ ওভারে তাঁর বোলিং ছিল গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নুতনেরা ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তাঁদের শক্তিশালী ব্যাটিং পারফরম্যান্স বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

Bd-vs-Wi-ODI-1
ওয়েষ্ট ইন্ডিজ টুর, ছবি ডেইলিষ্টার
সফরের মূল্যায়ন করলে বলা যায়, বাংলাদেশের এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর ছিল মিশ্র অভিজ্ঞতায় ভরা। টেস্ট সিরিজে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত কামব্যাক এবং টি-টোয়েন্টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পারফরম্যান্স বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিক শক্তির প্রমাণ দিয়েছে। খেলোয়াড়দের মধ্যে ধারাবাহিকতার অভাব এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে চাপ সামলানোর দুর্বলতা সফরের প্রধান শিক্ষা।

অন্যদিকে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল তাদের হোম কন্ডিশনের পুরো সুবিধা কাজে লাগিয়ে ফরম্যাটভেদে ভালো খেলেছে।

বাংলাদেশ দলের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শুধুমাত্র একটি ক্রিকেট সিরিজ নয়; এটি ছিল ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি। দলের শক্তি ও দুর্বলতা উভয়ই এখানে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। কোচিং স্টাফ ও ম্যানেজমেন্টকে এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের সফরগুলোর জন্য আরও প্রস্তুত হতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here