বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’র গাড়িবহরে হামলা: গ্রেফতার ৫ জন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’র গাড়িবহরে হামলা: গ্রেফতার ৫ জন

0
49
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’র গাড়িবহরে হামলা

বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচির গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হৃদয় ঘরামী বাদী হয়ে মোল্লাহাট থানায় মামলাটি করেন। মামলায় ৭৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের মোল্লাহাটের মাদরাসাঘাট এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। ঢাকাগামী ‘মার্চ ফর ইউনিটি’র গাড়িবহরকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় দুর্বৃত্তরা গাড়ি থামিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক আক্রমণ চালায়। শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুললে মুহূর্তেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের সংঘর্ষ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় অবশেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে মাদরাসাঘাট এলাকার ইমাদ পরিবহণের কাউন্টার ম্যান কালু ফরাজীকে। মামলায় উল্লেখিত ৭৪ জনের মধ্যে ইতোমধ্যেই মোস্তাক মুন্সি, উজ্জল সরকার, হানিফ, সাব্বির ও আব্দুর রহমান নামের পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাগেরহাটের মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, গ্রেফতারদের বিকেলে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই হামলার পেছনে দুর্বৃত্তদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র রয়েছে। হামলার উদ্দেশ্য ছিল তাদের আন্দোলনকে ব্যাহত করা। হৃদয় ঘরামী বলেন, “আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে এই ন্যক্কারজনক হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি আমাদের কণ্ঠরোধ করার একটি পরিকল্পিত প্রয়াস। আমরা আইনের প্রতি আস্থা রাখছি এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

ঘটনার পরপরই পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোল্লাহাট থানার ওসি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “এই ঘটনায় কারা জড়িত তা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করার কাজ চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের গ্রেফতার করতে আমরা বদ্ধপরিকর।” এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে এ হামলা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের ওপর এমন হামলা সমাজের সার্বিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।

‘মার্চ ফর ইউনিটি’ কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সমাজে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করছে। তাদের এই উদ্যোগ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রশংসিত হলেও, মোল্লাহাটের এ হামলা কর্মসূচির উদ্দেশ্যকে বাধাগ্রস্ত করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

মোল্লাহাটে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’র গাড়িবহরে হামলার ঘটনা শুধু একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি নয়, বরং এটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের আঘাত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই আশার সঞ্চার করেছে। তবে দেশবাসী আশা করছে, ন্যায়ের পথে অগ্রসর হয়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।“একতার কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা: শিক্ষার্থীদের ‘মার্চ ফর ইউনিটি’তে হামলা-শীর্ষক এই ঘটনাটি সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি দেশের দায়বদ্ধতাকে আরও জোরালোভাবে সামনে নিয়ে এসেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here