গাজার হাসপাতাল পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়ার আটক: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গাজা সংকটের নতুন অধ্যায়

গাজার হাসপাতাল পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়ার আটক: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গাজা সংকটের নতুন অধ্যায়

0
46
গাজার হাসপাতাল পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়ার আটক

ইসরায়েলের সেনাবাহিনী সম্প্রতি অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডা. হুসাম আবু সাফিয়াকে আটক করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিশ্বজুড়ে এ ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার ৩ জানুয়ারি আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আবু সাফিয়াকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে এবং হামাস সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য হওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার ২৭ ডিসেম্বর ইসরায়েলি বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলের কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযান চালায়। এই অভিযানের সময় হাসপাতালের রোগী এবং কর্মীদের সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়। এরপর হাসপাতালের একাংশে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ডা. আবু সাফিয়া সব রোগীকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য হাসপাতাল ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। তার এই মানবিক অবস্থান সত্ত্বেও তাকে আটক করে ইসরায়েলি সেনারা। এছাড়া হাসপাতালের আরও কয়েক ডজন কর্মীকেও আটক করা হয়।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আবু সাফিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তিনি সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।” তবে গ্রেফতারের ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ প্রথমে তাকে হেফাজতে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করে।

ডা. হুসাম আবু সাফিয়ার আটকের ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। দ্য ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস ইসরায়েল (পিএইচআরআই) এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ইসরায়েলি সেনাদের এ ধরনের আচরণকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, “গাজার হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের ওপর এমন হামলা সম্পূর্ণ অমানবিক। ইসরায়েলের উচিত অবিলম্বে ডা. আবু সাফিয়াকে মুক্তি দেওয়া এবং এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা।”

গাজায় ইতোমধ্যে মানবিক বিপর্যয় চরমে পৌঁছেছে। ইসরায়েলি অবরোধ, ক্রমাগত বোমাবর্ষণ, এবং মৌলিক সেবা অবরুদ্ধ থাকার কারণে সাধারণ মানুষের জীবন যাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। হাসপাতালগুলোর ওপর এই ধরনের আক্রমণ গাজার স্বাস্থ্যসেবাকে আরও বিপর্যস্ত করছে। কামাল আদওয়ান হাসপাতাল গাজার উত্তরাঞ্চলের অন্যতম প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র। এই হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে হাজার হাজার মানুষ এখন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ইসরায়েলের প্রতি গাজায় মানবাধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) এক বিবৃতিতে বলেছে, “চিকিৎসা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের ওপর হামলা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমরা ইসরায়েলের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলে।”

ডা. আবু সাফিয়ার আটক এবং কামাল আদওয়ান হাসপাতালে হামলার ঘটনায় গাজার চিকিৎসকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, “ডা. আবু সাফিয়া ছিলেন একজন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ চিকিৎসক যিনি সবসময় রোগীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তার আটক আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাকে গভীর সংকটে ফেলেছে।”

ইসরায়েলের সঙ্গে গাজার দীর্ঘদিনের সংঘাতের ফলে গাজার জনগণের জীবন প্রতিনিয়ত সংকটাপন্ন হচ্ছে। অবরোধের কারণে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ এবং চিকিৎসা সামগ্রীর তীব্র সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসা সেবার মতো মৌলিক সেবা ব্যাহত হওয়া গাজাবাসীর দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ডা. হুসাম আবু সাফিয়ার আটক এবং কামাল আদওয়ান হাসপাতালের ওপর হামলার ঘটনা ইসরায়েল-গাজা সংঘাতের আরেকটি নৃশংস উদাহরণ। এ ধরনের ঘটনা শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘনই নয়, বরং এটি গাজার জনগণের জন্য একটি মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ বিষয়ে আরও সক্রিয় হওয়া এবং গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here