বর্তমান বিশ্বে, স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে, অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। অ্যান্ড্রয়েডের ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, এবং এতে থাকা বিভিন্ন সুবিধা ও ফিচারের কারণে অনেক ব্যবহারকারী এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। কিন্তু, অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমের ব্যাপক ব্যবহারের সঙ্গে একাধিক নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। গুগল, যে অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমের পেছনে মূল কাজ করে, তারা এই নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়ে নিয়মিত সতর্কতা প্রকাশ করে থাকে। গুগলের মতে, অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেমে বিভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা ত্রুটি ও ঝুঁকি রয়েছে, এবং সেগুলির থেকে নিরাপদ থাকার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রয়েছে যা গ্রহণ করা উচিত।
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের পেছনে মূলত গুগল কাজ করছে, তবে এটি নির্মাণের সময় বিভিন্ন ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানরা নিজেদের কাস্টমাইজড ইউজার ইন্টারফেস (UI) তৈরি করে, যেমন স্যামসাং, শাওমি, ওয়ানপ্লাস, এবং অন্যান্য কোম্পানির ফোন। গুগল অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এবং প্লে স্টোর পরিচালনা করে, তবে এন্ড্রয়েড নির্মাতারা তাদের ফোনে আলাদা সফটওয়্যার কাস্টমাইজেশনের মাধ্যমে সিকিউরিটি ব্যবস্থা প্রণয়ন করে থাকে। এই কারণে, নিরাপত্তা সিস্টেমের মধ্যে একটি বিভাজন দেখা দেয়, যার ফলে কিছু ডিভাইস গুগল থেকে আসা নিরাপত্তা আপডেট পেতে বিলম্বিত হয়।
নিরাপত্তার বিষয়ে গুগল এবং নির্মাতাদের মধ্যে এই বিভাজন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি তৈরি করে। গুগল সর্বদা নিয়মিত সিকিউরিটি প্যাচ প্রকাশ করে, তবে যদি একটি ফোন নির্মাতা এই আপডেট বিলম্বিত করে, তখন ফোনটি নিরাপত্তা দুর্বলতার শিকার হতে পারে।
অপরদিকে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে নানা ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকতে পারে, যা কিছুটা প্রযুক্তিগত বিষয়ে গভীর হলেও, ব্যবহারকারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সাধারণ নিরাপত্তা ত্রুটি এবং ঝুঁকি হল:
ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাস। অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাসের আক্রমণ একটি সাধারণ সমস্যা। এই ম্যালওয়্যার সাধারণত তৃতীয় পক্ষের অ্যাপস বা জাল অ্যাপের মাধ্যমে ফোনে প্রবেশ করে এবং তা ফোনের তথ্য চুরি করতে পারে বা সিস্টেমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। গুগল প্লে স্টোরের জন্য এর কিছু নির্ধারিত গাইডলাইন রয়েছে, তবে তৃতীয় পক্ষের অ্যাপের মাধ্যমে এমন আক্রমণ হতে পারে যা প্লে স্টোরের নজর এড়িয়ে যেতে পারে।
নিরাপত্তা প্যাচের অভাব। গুগল নিয়মিত অ্যান্ড্রয়েডের জন্য নিরাপত্তা প্যাচ প্রদান করলেও, সব নির্মাতারা এই প্যাচগুলো সঠিক সময়ে এবং প্রতিটি ডিভাইসে একযোগভাবে রোল আউট করে না। এর ফলে পুরানো ডিভাইসগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে, কারণ তারা নিরাপত্তা দুর্বলতার সঙ্গে কাজ করতে থাকে।
ফিশিং আক্রমণ। ফিশিং আক্রমণগুলোর মাধ্যমে অপরাধীরা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে। এটি সাধারণত ইমেইল, টেক্সট মেসেজ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ঘটে থাকে, যেখানে ব্যবহারকারীদের নকল ওয়েবসাইটে নিয়ে গিয়ে তাদের পাসওয়ার্ড এবং অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য চুরি করা হয়।
অ্যানড্রয়েড সিস্টেমের দুর্বলতা। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের সিস্টেম লেভেল দুর্বলতাগুলি অ্যাপ্লিকেশন এবং ইউজার অ্যাক্সেসের মাধ্যমে হ্যাকারদের জন্য সুযোগ তৈরি করে। সিস্টেম স্তরের দুর্বলতার জন্য অনেক সময় নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন এবং ডিভাইসগুলো অ্যাক্সেসের মাধ্যমে সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করতে পারে, যা ফোনের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে ফেলে।
গুগল একাধিক পদ্ধতিতে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে, এবং তারা ব্যবহারকারীদের সচেতন করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। গুগল প্লে স্টোরে একটি শক্তিশালি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে যা ব্যবহারকারীদের নিরাপদে অ্যাপ ডাউনলোড করতে সহায়তা করে। এছাড়া, গুগল প্লে প্রোটেক্ট এর মাধ্যমে অ্যাপগুলো নিয়মিত স্ক্যান হয় এবং যদি কোনো অ্যাপ সন্দেহজনক হয় তবে সেটি ব্যবহারকারীদের কাছে সতর্কতা জানিয়ে দেয়।
নিরাপত্তা প্যাচ। গুগল প্রতি মাসে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য নতুন নিরাপত্তা প্যাচ প্রকাশ করে, যা সিস্টেমের দুর্বলতাগুলি সঠিক করে এবং নতুন নিরাপত্তা ফিচার যুক্ত করে। এই প্যাচগুলো সব ডিভাইসে পেতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হতে পারে, তবে গুগল সাধারণত এগুলো দ্রুত রোল আউট করে।
গুগল প্লে প্রোটেক্ট একটি সিস্টেম যা প্লে স্টোরের অ্যাপ্লিকেশনগুলো স্ক্যান করে, যাতে ম্যালওয়্যার বা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়। এটি ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকে এবং তাদের সচেতন করে।
গুগল, টুজি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা 2FA ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখার পরামর্শ দেয়। এটি একটি অতিরিক্ত স্তরের নিরাপত্তা প্রদান করে যা শুধু পাসওয়ার্ডের উপর নির্ভর করে না, বরং একটি কোড বা অ্যাপসের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর পরিচয় নিশ্চিত করে।
গুগল ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ পরামর্শ দিয়েছে, যা অনুসরণ করলে অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিরাপদ রাখা সম্ভব:
প্রথমত নিরাপত্তা প্যাচ নিয়মিত আপডেট করতে হবে। অ্যান্ড্রয়েডের সিকিউরিটি প্যাচ নিয়মিত আপডেট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সিস্টেমের নিরাপত্তা ঝুঁকি দূর করে এবং ব্যবহারকারীর ডিভাইসকে সুরক্ষিত রাখে।
ফলস্ অ্যাপ থেকে বিরত থাকতে হবে। অফিশিয়াল গুগল প্লে স্টোর ছাড়া অন্য কোনও উৎস থেকে অ্যাপ ডাউনলোড না করা নিরাপদ। থার্ড পার্টি অ্যাপস অনেক সময় ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দেয় যা ফোনের নিরাপত্তায় ক্ষতি করতে পারে।
নিরাপদ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। অ্যান্ড্রয়েড ফোনের পাসওয়ার্ড বা পিন নিরাপদ রাখতে হবে। শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আনলক ব্যবহারের মাধ্যমে আরও নিরাপত্তা বাড়ানো যেতে পারে।
ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সক্রিয় করতে হবে। গুগল অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা আরও নিশ্চিত করতে ২-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সক্রিয় করা উচিত। এটি একটি অতিরিক্ত স্তরের সুরক্ষা প্রদান করে।
অফলাইন মুডে কাজ করতে হবে। আপনার ফোনটি যদি খোলা থাকে এবং কোনও গুরুত্বপূর্ণ কাজ না থাকে, তবে ফোনটি অফলাইন মুডে রাখুন, যাতে আপনি অনলাইনে আক্রমণের শিকার না হন।
অ্যান্ড্রয়েড একটি শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম হলেও, এর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহারকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। গুগল এবং অ্যান্ড্রয়েড নির্মাতাদের মধ্যে বিভাজনের কারণে সিকিউরিটি আপডেটের মাঝে নিজের গুরুত্বপুর্ন তথ্য যেন নিরাপদ থাকে এ ব্যাপারে ব্যবহারকারীকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কেননা ব্যবহারকারী নিজের ইচ্ছাতেই তার তথ্যগুলো অন্যের সাথে জেনে বুঝে শেয়ার করার অনুমতি দিয়ে থাকেন। এ কারনে গুগল এই বিষয়গুলোকে সাবধানতার সাথে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে।