গুগলের সুন্দর পিচাই এবং মাইক্রোসফটের সত্য নাদেলা, দুই প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রযুক্তি নির্বাহী, সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনের দ্য হানড্রেড তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এই তালিকাটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নাম ঘোষণা করে এবং তাদের কাজের মাধ্যমে বিশ্বে যে প্রভাব তারা বিস্তার করেছেন, তা তুলে ধরে। পিচাই এবং নাদেলা শুধু প্রযুক্তি জগতে নয়, বরং নেতৃত্ব, উদ্ভাবন এবং বৈশ্বিক সমস্যার সমাধানে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য পরিচিত।
সুন্দর পিচাই ২০১৫ সালে গুগলের সিইও হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০১৯ সালে তিনি গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ভারতীয় শহর চেন্নাইয়ে এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া পিচাই তার মেধা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন। তার নেতৃত্বে, গুগল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং পরিবেশ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। পিচাইয়ের নেতৃত্বে গুগল এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে যা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজতর করেছে। তার অন্যতম বড় অবদান হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উদ্ভাবন ও ব্যবহার। গুগল সার্চ এবং গুগল অ্যাসিস্ট্যান্টে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফল প্রয়োগ পিচাইয়ের নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া, ক্লাউড কম্পিউটিং ক্ষেত্রে গুগল ক্লাউড একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। পিচাই তার নেতৃত্বে এমন একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছেন যা ব্যবহারকারী, কর্মী এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়নশীল। তিনি সবসময় নতুন ধারণা এবং প্রযুক্তির উপর জোর দেন, যা ভবিষ্যতের জন্য প্রযুক্তি জগতে পথ দেখায়।
অন্যদিকে, সত্য নাদেলা ২০১৪ সালে মাইক্রোসফটের সিইও হিসেবে নিযুক্ত হন। তার অধীনে মাইক্রোসফট নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। হায়দ্রাবাদে জন্মগ্রহণ করা নাদেলা তার নেতৃত্বের গুণাবলির মাধ্যমে মাইক্রোসফটকে কেবল একটি সফটওয়্যার কোম্পানি থেকে একটি ক্লাউড এবং এআই-চালিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছেন। তার অন্যতম বড় কৃতিত্ব হল অ্যাজিউর ক্লাউড প্ল্যাটফর্মকে বিশ্বব্যাপী সফল করা। ননাদেলার নেতৃত্বে মাইক্রোসফট অফিস ৩৬৫ এবং মাইক্রোসফট টিমসের মতো পণ্যগুলো বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়েছে। তিনি শুধু প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং একটি মানবিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কোম্পানিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বে, মাইক্রোসফট বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশগত উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে কার্বন নিরপেক্ষতার লক্ষ্য অর্জন এবং প্রযুক্তিকে আরও সবার জন্য সহজলভ্য করা।
দ্য হানড্রেডে তাদের অন্তর্ভুক্তি প্রমাণ করে যে প্রযুক্তি দুনিয়ায় নেতৃত্বের মানদণ্ড তারা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। পিচাই এবং নাদেলা দুজনেই প্রযুক্তিকে মানুষের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকারী করে তুলতে নিরলস কাজ করেছেন। তাদের নেতৃত্ব কেবলমাত্র প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর আর্থিক সাফল্যের জন্য নয়, বরং সমাজে প্রযুক্তির ইতিবাচক প্রভাব নিশ্চিত করতেও ভূমিকা রেখেছে। সুন্দর পিচাই এবং সত্য নাদেলার সাফল্যের গল্প তরুণদের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তারা দেখিয়েছেন কীভাবে কঠোর পরিশ্রম, মেধা এবং নেতৃত্বগুণ মানুষকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। তাদের উত্থানের গল্প ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর তরুণদের জন্য এক আশার আলো। বিশেষ করে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তাদের যাত্রা প্রমাণ করে যে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে শুরু করে বৈশ্বিক নেতৃত্বে পৌঁছানো সম্ভব।পিচাই এবং নাদেলার মধ্যে আরও একটি সাধারণ দিক হল তাদের নেতৃত্বের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। তারা উভয়েই এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছেন যেখানে কর্মীরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে এবং তাদের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগাতে পারে। তারা বিভিন্ন সংস্কৃতি, জাতি এবং লিঙ্গের মানুষের জন্য সুযোগ তৈরি করেছেন, যা বৈচিত্র্য এবং অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের নেতৃত্বগুণের সবচেয়ে বড় দিক হল তারা পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত এবং প্রতিকূলতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেন। পিচাই এবং নাদেলা প্রমাণ করেছেন যে নেতৃত্ব মানে শুধু কোম্পানির মুনাফা বাড়ানো নয়, বরং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা। তাদের সাফল্য প্রমাণ করে যে সামাজিক ও পরিবেশগত দায়িত্ব পালন করেও বিশ্বমানের নেতৃত্ব প্রদান করা সম্ভব।
এই দুই ব্যক্তিত্বের জীবন এবং কাজ থেকে শিক্ষার্থীরা অনেক কিছু শিখতে পারে। তাদের নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনের প্রতি তাদের অঙ্গীকার তরুণদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হতে পারে। তাদের সাফল্যের গল্প প্রমাণ করে যে কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক দিকনির্দেশনা একজন মানুষকে কেবল নিজের নয়, বরং পুরো সমাজের উন্নতির জন্য কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। পিচাই এবং নাদেলার মতো নেতারা বিশ্বকে একটি উন্নত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রযুক্তি-চালিত ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।