শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও একটি বিশেষজ্ঞ পরামর্শক কমিটি দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে একীভূতভাবে উন্নীত করার প্রস্তাবনা করছে। এতে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাকে একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসার সুপারিশ রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষকদের বেতন কাঠামো উন্নত করা, শিক্ষার মানোন্নয়নে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্কুল পর্যায়ে মিড-ডে মিল চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
পরামর্শক কমিটি প্রাথমিক স্তরে পাবলিক পরীক্ষা বন্ধের পক্ষে মত দিয়েছে। তারা বলছে, ধারাবাহিক মূল্যায়ন এবং প্রান্তিক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের শেখার উন্নতিতে যথেষ্ট। জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নের (এনএসএ) আদলে একটি নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে।
বর্তমানে শিক্ষার্থীদের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষার আওতায় আনা হয়েছে। নতুন পরিকল্পনায় ধাপে ধাপে দশম এবং পরে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা সর্বজনীন করার সুপারিশ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত সময়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
শিক্ষকদের কাজের পরিবেশ উন্নত করতে এবং তাদের পেশাগত মর্যাদা বৃদ্ধি করতে বেতন কাঠামো উন্নত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আলাদাভাবে শিক্ষকদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের বিষয়েও সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া পেশাগত উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট পথরেখা এবং শিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার মান নিশ্চিত করার জন্য পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়ের নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে অতিরিক্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালুর প্রস্তাব রয়েছে। এতে শিক্ষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
সব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মিড-ডে মিল চালু করার সুপারিশ করেছে কমিটি। এটি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়ক হবে বলে মনে করছে তারা।
দুর্গম ও পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষকদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা এবং এসব এলাকায় আরও আবাসিক বিদ্যালয় চালু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে “প্যারা শিক্ষক” নিয়োগের বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে।
শিক্ষা খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বলেছেন, “আমাদের সুপারিশের মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের সুযোগ নিশ্চিত করা। পাশাপাশি শিক্ষকদের জন্য উন্নত পরিবেশ ও সুযোগ তৈরি করতে হবে। আমাদের প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান এবং শিক্ষকদের পেশাগত সক্ষমতা আরও উন্নত হবে।”
এই সুপারিশগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করছে এবং আগামী বাজেটে এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা করছে। সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী, এই উদ্যোগগুলো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।