বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে চার ঘণ্টার ব্যবধানে স্থলমাইন বিস্ফোরণে তিনজন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে পৃথক তিনটি বিস্ফোরণে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। আহতদের স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।
প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ির আশারতলি সীমান্ত এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দা আলী হোসেন (৩০) এ বিস্ফোরণে আহত হন। শূন্যরেখা থেকে মিয়ানমারের কয়েক শ গজ ভেতরে ঘটনাটি ঘটে। বিস্ফোরণে আলী হোসেনের বাঁ পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ডান পা মারাত্মকভাবে ঝলসে যায়। তিনি নাইক্ষ্যংছড়ির মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৪৯ নম্বর পিলার এলাকায় দ্বিতীয় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। শূন্যরেখা থেকে প্রায় ৪০০ মিটার ভেতরে এ বিস্ফোরণে মো. রাসেল (২৫) আহত হন। তিনি সীমান্তবর্তী আশারতলি এলাকার সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মজিবর রহমানের ছেলে। অপরদিকে, জামগছড়ি এলাকায় তৃতীয় বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আরিফ উল্লাহ (৩০) নামের একজন যুবক আহত হন। তিনি সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাফর আহমদের ছেলে। তাঁকে গুরুতর অবস্থায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে রাসেল ও আরিফ উল্লাহকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আশারতলি এলাকার বাসিন্দা ছৈয়দ কাশেম জানান, আহত আলী ও রাসেলসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি সীমান্তের ৪৮ ও ৪৯ নম্বর পিলারের মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছিলেন। সেখানে শূন্যরেখা অতিক্রম করে কয়েক শ গজ ভেতরে তাঁরা স্থলমাইনের কবলে পড়েন। আহতদের সঙ্গে থাকা অন্যরা তাঁদের উদ্ধার করে এপারে নিয়ে আসেন। ছৈয়দ কাশেম আরও জানান, আলী হোসেনের একটি পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং রাসেলের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত লেগেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার জানান, আহত যুবকেরা সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমার থেকে সুপারি আনতে গিয়েছিলেন। এ সময় স্থলমাইনের বিস্ফোরণে তাঁরা আহত হন। তিনি আরও বলেন, সীমান্তের আশারতলি, ফুলতলি, আমতলি ও লেমুছড়ি পয়েন্ট দিয়ে অনেকেই নিয়মিত মিয়ানমারে যাতায়াত করেন। চোরাচালানকারীরাও এসব পথ ব্যবহার করছে, যা সীমান্ত এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসরুরুল হক বিস্ফোরণে তিনজন আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আহত ব্যক্তিদের দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি সীমান্ত এলাকায় স্থলমাইন পুঁতে রেখেছে। এই বিস্ফোরণগুলো তারই ফলাফল।
এ ধরনের ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাঁরা সীমান্ত দিয়ে অননুমোদিত যাতায়াত বন্ধ করার পাশাপাশি চোরাচালান প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।