ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি উদযাপন রামাল্লাহতে

ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি উদযাপন রামাল্লাহতে

0
33
রামাল্লাহতে ফিলিস্তিনিদের বিরচিত সংবর্ধনা, ছবি: এপি

রামাল্লাহ, পশ্চিম তীর – ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারির প্রথম প্রহরে ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে বহনকারী একটি বাস রামাল্লাহ পৌঁছালে হাজার হাজার উল্লসিত মানুষের জমায়েতে তাদের বীরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই উদযাপনটি হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে প্রথম বন্দি বিনিময় চিহ্নিত করে।

মুক্তি পাওয়া বন্দিদের মধ্যে ৬৯ জন নারী ও ২১ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। তারা বাস থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে জনগণের আবেগময় সংবর্ধনার মুখোমুখি হন। উল্লসিত জনতা ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে স্লোগান দেয় এবং তাদের ফিরে আসাকে সম্মান জানায়। অনেক বন্দিকে উল্লসিত জনতার কাঁধে তুলে নেওয়া হয়, যা তাদের বীরোচিত অবস্থানকে চিত্রিত করে।

মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ৬২ বছর বয়সী খালিদা জারার, যিনি পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। খালিদা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনিক আটকাদেশে একাকী বন্দি ছিলেন। তার মুক্তি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটি এ ধরনের আটকাদেশের ন্যায়বিচার নিয়ে প্রশ্ন তোলে।৩৪ বছর বয়সী লতিফা মিশা’শা ২০২৩ সালের নভেম্বরে গাজা সমর্থনকারী একটি ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করায় গ্রেফতার হন। উসকানির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে তিনি ২০ মাস কারাগারে কাটান। মুক্তির পর তার ভাই বাসিল তার উল্লেখযোগ্য ওজন হ্রাসের কথা তুলে ধরেন। অন্যদিকে ২৪ বছর বয়সী শাথা জারাবা ২০২৪ সালের আগস্টে একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পোস্টের কারণে গ্রেফতার হন, যেখানে তিনি গাজায় ইসরায়েলের কার্যক্রম সমালোচনা করেছিলেন। তিনি তার কারাগারের কঠিন অবস্থার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে পর্যাপ্ত পোশাকের অভাব এবং ঠাণ্ডা পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়। শাথা বলেন, “আমার গ্রেফতার ছিল অযৌক্তিক এবং অন্যায়।”

ইসরায়েলি কারা কর্তৃপক্ষ আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল যে প্রকাশ্যে উদযাপন হলে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের পুনরায় গ্রেফতার করা হতে পারে। তবু, রামাল্লাহর বৃহৎ জমায়েত এই সতর্কতাকে উপেক্ষা করে, যা বন্দিদের ফিরে আসার গভীর সামাজিক গুরুত্ব তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বিশেষ করে অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের জন্য আটক ব্যক্তিদের প্রশাসনিক আটকাদেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলের আটক প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী করার আহ্বান জানিয়েছে।

এই বন্দি মুক্তি ১৫ মাসব্যাপী সংঘাতের অবসানের লক্ষ্যে চুক্তির একটি অংশ। চুক্তির অধীনে হামাস ৩৩ জন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে, যাদের মধ্যে শিশু এবং নারীও রয়েছে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা শত শত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে তিনজন ইসরায়েলি বন্দি এবং ৯০ জন ফিলিস্তিনি মুক্তি পেয়েছেন। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এই চুক্তি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে বন্দিদের মুক্তি ইতিবাচক মনে করলেও, কেউ কেউ ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তিকে হুমকি হিসেবে দেখছেন।

যুদ্ধবিরতি এবং বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উভয় পক্ষই চুক্তি বজায় রাখতে এবং মৌলিক সমস্যাগুলো সমাধান করতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ঘনিষ্ঠভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনি বন্দিদের পরিবার ও সম্প্রদায়ের জন্য এই ঘটনাটি স্বস্তি ও উদযাপনের মুহূর্ত হয়ে এসেছে। তবে দীর্ঘমেয়াদী সংঘাতের সমাধান অনিশ্চিত রয়ে গেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here