বেক্সিমকোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত- বন্ধকি শেয়ার বিক্রির উদ্দ্যোগ সরকারের

বেক্সিমকোর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত- বন্ধকি শেয়ার বিক্রির উদ্দ্যোগ সরকারের

0
43
সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থপাচার ফাইল ছবি

বেক্সিমকো লিমিটেডের টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল খাতের ১৬টি কোম্পানির কর্মীদের দীর্ঘদিনের পাওনা পরিশোধে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ও শাইনপুকুর সিরামিকসের বন্ধক রাখা শেয়ার বিক্রি করে এ অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য পাওনা মেটাতে প্রয়োজনীয় এই অর্থ আসবে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা পরিষদের এক বিশেষ বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাখাওয়াত হোসেন। বৈঠকে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে কর্মরত শ্রমিকদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।

৫০০-৬০০ কোটি টাকার পাওনা পরিশোধ হবে

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন জানান, শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য পাওনা পরিশোধে প্রয়োজন হতে পারে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। এ অর্থ আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে তোলা হবে। তিনি আরও বলেন, “বেক্সিমকোর দেউলিয়া হওয়া কোম্পানিগুলোতে কর্মরত শ্রমিকদের বেতন, গ্রাচুয়িটি ও অন্যান্য আইনি সুবিধা পরিশোধের জন্য অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, অর্থ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক মিলে এ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করবে।”

ঋণ কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু

বেক্সিমকোর ১৬টি কোম্পানি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ২৮ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে অনিয়মের। এই ঋণগুলো কীভাবে নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হবে বলে উপদেষ্টা পরিষদ জানিয়েছে।

তিনি বলেন, “যদি কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়, তাহলে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকেই ছাড় দেওয়া হবে না। রিসিভারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

শ্রমিকদের দাবি ও আন্দোলন

বেশ কয়েক মাস ধরে শ্রমিকরা তাদের বেতন ও অন্যান্য পাওনা আদায়ের জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। বেক্সিমকোর বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাননি। এছাড়া, কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের চাকরি নিয়েও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

এক শ্রমিক নেতা জানান, “আমরা বেতন, গ্রাচুয়িটি ও অন্যান্য আইনি সুবিধা চাই। দীর্ঘদিন আন্দোলন করেও যখন কোনো ফল পাইনি, তখনই সরকার এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে। তবে আমরা চাই এই প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হোক।”

বেক্সিমকোর ঋণ পরিমাণ

ব্রিফিংয়ে উপদেষ্টা পরিষদ জানায়, বেক্সিমকো লিমিটেডের নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ বিশাল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঋণ হলো:

  • সোনালী ব্যাংক: ১,৪২৪ কোটি টাকা
  • জনতা ব্যাংক: ২৩,২৮৫ কোটি টাকা
  • অগ্রণী ব্যাংক: ৪২০ কোটি টাকা
  • রূপালী ব্যাংক: ৯৮৭ কোটি টাকা
  • ন্যাশনাল ব্যাংক: ৩১৫ কোটি টাকা
  • ইউসিবি ব্যাংক: ৩৩৩ কোটি টাকা
  • এক্সিম ব্যাংক: ৪৯৭ কোটি টাকা

শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা

আগামী রোববার অর্থ বিভাগ, সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সাথে সভা করে বেক্সিমকো ফার্মা ও শাইনপুকুর সিরামিকসের বন্ধক রাখা শেয়ার বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে। উপদেষ্টা পরিষদ জানিয়েছে, শেয়ার বিক্রির অর্থ থেকে প্রথমে শ্রমিকদের পাওনা মেটানো হবে।

শ্রমিকদের স্বস্তি

এই সিদ্ধান্তে শ্রমিকরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ তাদের দীর্ঘদিনের দাবির বাস্তবায়নের একটি বড় পদক্ষেপ। তবে অনেক শ্রমিক নেতা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যদি প্রক্রিয়াটি ধীরগতিতে চলে তবে তাদের দুর্ভোগ বাড়বে।

এক শ্রমিক নেতা বলেন, “আমরা চাই দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হোক। অনেক শ্রমিক পরিবার আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। আমরা আর অপেক্ষা করতে পারব না।”

উপদেষ্টা পরিষদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে থাকা কারখানাগুলোর দায়িত্ব এখন সরকারের হাতে। তবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেচাকেনার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত উপদেষ্টা পরিষদ নেবে না। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “বেক্সিমকোর দুএকটি প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। সেগুলো বিক্রির বিষয়টি ভবিষ্যতে দেখা হবে। তবে বর্তমান লক্ষ্য হলো শ্রমিকদের পাওনা নিশ্চিত করা।”

আন্দোলনের ধারাবাহিকতা

শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে তারা আবার আন্দোলনে নামবেন।

বেক্সিমকোর বন্ধক রাখা শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত দেশের শিল্পখাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে এই সিদ্ধান্ত দ্রুত ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হলে শ্রমিকদের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে। তাই সরকারের উচিত শ্রমিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত কার্যক্রম সম্পন্ন করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here