সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক বিমান দুর্ঘটনা ঘটছে, যা অনেকের দৃষ্টিতে শুধুমাত্র যান্ত্রিক ব্যর্থতা বা পাইলটের ভুল নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর প্রতিচ্ছবি। এই ঘটনাগুলো এমন একটি সময়ে ঘটছে যখন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী সামরিক ও অর্থনৈতিক আধিপত্য বজায় রাখতে নানা ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অস্ত্র ব্যবসা, সাম্রাজ্যবাদী নীতি এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার কারণে বর্তমান বিশ্বে ক্রমাগত সংঘাত ও সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনাগুলোর পর্যালোচনা
২০২৪ সালের মার্চ মাসে টেনেসির ন্যাশভিলে একটি ছোট বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাঁচজন কানাডিয়ান নাগরিক নিহত হয়। এর আগে, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ম্যাসাচুসেটসে একটি সেসনা-৩১০ মডেলের বিমান দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হন। সামরিক ক্ষেত্রে, ২০২৪ সালের নভেম্বরে ভূমধ্যসাগরে মার্কিন সামরিক বিমান বিধ্বস্ত হয়। যদিও প্রতিটি দুর্ঘটনার নিজস্ব কারণ রয়েছে, তবে এই দুর্ঘটনাগুলোর সময়কাল এবং সংখ্যা চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কি নিছকই কাকতালীয়, নাকি বৃহত্তর কোনো শক্তির ইঙ্গিত?
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও অস্ত্র ব্যবসা
বৈশ্বিক রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কের কেন্দ্রে। অস্ত্র ব্যবসার মাধ্যমে দেশটি কোটি কোটি ডলারের লাভ করে চলেছে, কিন্তু এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ ও সংঘাত বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থন এবং ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের মদত দেওয়া—এটি এক ধরনের আধিপত্যবাদী পরিকল্পনার অংশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক নীতির ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকায় মার্কিন অস্ত্রের ছড়াছড়ি এবং সামরিক হস্তক্ষেপ কেবল ধ্বংসযজ্ঞই ডেকে আনছে। এই নীতিগুলো পূর্ববর্তী ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপনিবেশিক শাসনের সঙ্গে তুলনীয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবিক মূল্যবোধের অভাব
ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল, হারিকেন, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্রমশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এসব দুর্যোগ প্রকৃতির প্রতিশোধ নাকি মানবজাতির কর্মফল? পরিবেশ দূষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা অপরিসীম। একদিকে তারা বিশ্বকে পরিবেশ রক্ষার জন্য উপদেশ দেয়, অন্যদিকে তাদের নিজস্ব শিল্প ও সামরিক কার্যক্রম জলবায়ু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করছে।
মুসলিম বিশ্ব ও রাজনৈতিক নীরবতা
বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও ইসরায়েলি আগ্রাসন সম্পর্কে অবগত থাকলেও, সাময়িক রাজনৈতিক সুবিধার আশায় তারা নীরব ভূমিকা পালন করছে। সুয়েজ খাল ও পানামা খালের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে, অথচ মুসলিম বিশ্বের বড় অংশ এটি বুঝেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।
ভবিষ্যৎ পরিণতি ও করণীয়
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ঘটনা ও আগ্রাসী নীতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন হতে হবে। ইতিহাস সাক্ষী যে অন্যায় ও অমানবিক কার্যক্রমের পরিণতি সবসময়ই ভয়াবহ হয়। কোরআনের সামুদ বা লুত জাতির মতো পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে মানবিক মূল্যবোধ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনা, সামরিক নীতি, অস্ত্র ব্যবসা এবং বৈশ্বিক পরিবেশ ধ্বংসের ফলে মানবজাতি এক ভয়াবহ সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটি শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি সতর্কবার্তা। এখনই সময় বিশ্ববাসীকে এই আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এবং মানবিক মূল্যবোধ পুনরুদ্ধার করার, যাতে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় এড়ানো যায়।